স্কুলের পথে সরকারি গাড়ির ধাক্কা, নিভে গেল মেয়েটির প্রাণ

 

সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রী আয়শার মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে জড়ো হন তার স্বজন ও এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার দুপুরে মাদারীপুর সদর হাসাপাতালে

জাহাঙ্গীর মাতুব্বর তাঁর মেয়ে আয়শা আক্তারকে (৯) রোজ স্কুলে নিয়ে যেতেন। মাঝেমধ্যে বোনের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার বায়না ধরত ছোট ভাই রাফসান। আজও ছিল এমনই একটি দিন। বাবা তাঁর ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে নিজের পায়েচালিত ভ্যানে করে যাচ্ছিলেন স্কুলে। বাবার পেছনে বসা দুই ভাই–বোন। পথে হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস ভ্যানটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে প্রাণ হারায় আয়শা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাড়িটি সরকারি। মাদারীপুরের ডিসিপুলে ব্যবহৃত হয় গাড়িটি।


মাদারীপুর শহরের শেখ হাসিনা মহাসড়কের চৌরাস্তা এলাকায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় বাবা, মেয়ে ও ছেলে আহত হন। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক আয়শাকে মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।


আয়শা সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর এলাকার বাসিন্দা। সে শহরের উকিলপাড়া এলাকায় জাগরণী ফাউন্ডেশনের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।


পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আয়শা প্রতিদিনের মতো নিজ বাড়ি থেকে তার বাবার ভ্যানে করে স্কুলে যাওয়ার জন্য রওনা হয়। এ সময় পাঁচ বছর বয়সী ছোট ভাই রাফসানও বোনের সঙ্গে স্কুলে যেতে ভ্যানে ওঠে। ভ্যানটি মাদারীপুর শহরের চৌরাস্তা এলাকায় এলে পেছন থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস তাদের সজোরে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তেই ভ্যানটি মহাসড়কে উল্টে যায়। এ সময় ভ্যানের চালক জাহাঙ্গীর মাতুব্বর ও তাঁর দুই সন্তান গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আয়শাকে মৃত ঘোষণা করেন।


বেলা দুইটার দিকে নিহত আয়শার ছোট ভাই রাফসানের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তবে বাবা জাহাঙ্গীর শঙ্কামুক্ত। এসব তথ্য নিশ্চিত করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত আয়শাকে হাসপাতালে আনার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের তার মৃত্যু হয়।


হাসপাতালে বসে কথা হয় আয়শার চাচা জাহিদ মাতুব্বরের সঙ্গে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওর বাবার সব স্বপ্ন শ্যাষ হইয়া গেল। মাইয়ারে কত কষ্ট কইরা পড়ালেখা করাইতো। রোজ স্কুলে আনা–নেওয়া করত। আইজ ওর বাবার চোখের সামনে মাইয়াডা মইরা গেল। আমরা কেউ কিছুই করতে পারলাম না।’

চৌরাস্তা এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী আরিফুর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভ্যানটি তার পথ ধরে আস্তে আস্তে আসতেছিল। মাইক্রোবাসটি ভ্যানটিকে ওভারটেক করতে গিয়ে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দিলে ভ্যানটি মুহূর্তেই সড়কে উল্টে দুটি পল্টি দেয়। পরে মাইক্রোবাস থেকে কয়েকজন আনসার ও একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেট নামে। কিন্তু তারা আহতদের উদ্ধার না করে গাড়িতে উঠে চলে যায়।’


জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘাতক মাইক্রোবাসটি মাদারীপুরে ডিসি পুলের। এটি জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের যাতায়াতে ব্যবহৃত হয়। গাড়িটির নম্বর ঢাকা মেট্রো-চ ৫৩৫১৬৬। গাড়িতে ছিলেন একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ভিডিও ফুটেজ দেখে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) এস এম ফুয়াদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাড়িটি আমাদেরই। তবে আমাদের গাড়ির সঙ্গেই ওই ভ্যানটির ধাক্কা লেগেছিল কি না, এটি এখনো আমরা নিশ্চিত নই। বিষয়টি ডিসি স্যার জানেন। আর এই মাইক্রোবাসটি আমাদের নির্ধারিত চালক চালাচ্ছিলেন। ওই চালকের এমন ভুল হওয়ার কথা নয়।’


এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে আসি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তা ছাড়া এ ঘটনায় আমরা কিছু সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। সেখানে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস ভ্যানটিকে ধাক্কা দেয়, এমনটাই দেখা যাচ্ছে। গাড়িটি সরকারি। বিষয়টি আমরা আরও পর্যালোচনা করে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Post a Comment

Previous Post Next Post